হাঁটতে হাঁটতে সীমানা পেরিয়ে
....................................
আমরা দু’জনেই হাঁটছিলাম। তখন দুপুর পেরিয়ে বিকেল নামবে নামবে ভাব। রাস্তাটার নাম জানিনা। ও এসেছে শুধু একদিনের জন্যে। সকালে হাতে রান্না বাংগালী খাবার খাইয়ে দুপুরে এসেছিলাম সিডনীর বিখ্যাত ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্ট মায়া’তে। খেয়ে ও বললো ‘চলো হেঁটে দেখি। এর আগে যতবার সিডনী এসেছি শুধু হারবার আর অপেরা দেখেছি। এবার রাস্তাঘাট দেখি’। আমি নিজে এখনো সিডনীর রাস্তাঘাট চিনিনা। তারপরও ওর কথায় মায়া থেকে বের হয়ে একদিকে হাঁটা শুরু করলাম।
-তুমি জানো আমি কেনো পাকিস্তান ফিরে গিয়ে বেশীদিন থাকতে পারিনা?
-কেনো?’ বেশ আগ্রহ নিয়েই জিজ্ঞেস করলাম।
-কারন ওয়েষ্টে যে কোনো দেশে আমি রাস্তাঘাটে হেঁটে যে মজা পাই, যেভাবে ইচ্ছামত হাঁটতে পারি, আমার দেশে কখনোই তা পারিনা। একবার করাচীতে……’
ও বলেই যাচ্ছে। কিন্তু ওর কথার ঘোরেই যেনো আমি তখন চলে গেছি চট্রগ্রামে।
-আম্মা একটু হাঁটতে যাই।
-এত ভোরে?!
-হ্যাঁ, মানুষতো ভোরেই হাঁটে।
-দেখো, ছেলেদেরই হাঁটার নিরাপত্তা নাই, তুমি কেমনে হাঁটবা? এতভোরে রাস্তাঘাটে হাইজ্যাকার নেশাখোররা থাকে। যা পাবে ছিনায়ে নিবে। আর কিছু না পেলে ছুরি মেরে দিবে। তারউপর একলা মেয়ে দেখলেতো কথাই নাই।
……………
অথবা কোনো বিকেলে-
-আম্মা, এমনে একটু হাঁটতে বের হই।
-এমনে হাঁটতে যাবা মানে? রাস্তায় কেনো, ছাদে গিয়ে হাঁটো।
-আরে আশ্চর্য্য, ঐ একটুখানি ছাদে হাঁটা যায় নাকি? আর ছাদে গেলে ঐ পাশের কন্সট্রাকশানের কাজ চলতেছে যে বিল্ডিংটাতে ওটার শ্রমিকগুলা তাকায়ে থাকে, শিষ দেয়।
-তাহলে কোথাও যাওয়ার দরকার নাই। রাস্তাঘাটে এমনে এমনে ঘুরবা আর মানুষজন তোমার বাপের নামে বলবে ওনার এত বড় ধিংগী মেয়েটা রাস্তাঘাটে ঘুড়ে বেড়ায়……
…………………
-এই কী ভাবছো?
ওর হালকা ধাক্কায় চট্রগ্রামের সেই দমবন্ধ ভোর আর বিকেল থেকে একলাফে ফিরে আসি সিডনীর পড়ন্ত দুপুরে।
-উঁহু, কিছুনা। আমার হাঁটতে খুব ভালো লাগছে।’ গায়ের ওভারকোটটার হাতার ভিতর হাত গুটিয়ে আরাম করে হাঁটতে হাঁটতে পিছনের দিনগুলো ম্লান হয়ে আসে।
ও হাসে।
-বলেছি না? এখানে তুমি যে ড্রেসই পড়ো, হাঁটো বা দৌঁড়াও, যা ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা করো, কেউ তোমার দিকে ফিরেও তাকাবেনা। বেশ স্বস্তিদায়ক। ইউ ক্যান জাস্ট ফীল ইউরসেলফ, দ্যা ফিলিংস অব বিয়িং সেলফ অনলী, বিয়োন্ড বিয়িং আ গার্ল অর আ বয়।
আমি মাথা নাড়ি।
ও কথা বলেই যায়।
হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছি বুঝতে পারছিলাম না। রাস্তাটা বেশ পুরানো। পুরানো, কিন্তু অভিজাত। রাস্তার একপাশে সব ডুপ্লেক্স আর অন্যপাশে বিশাল বিশাল গাছের সারি। উপরে মাথা বাঁকিয়ে তাকালে মনে হয় গাছের ডালগুলো যেনো আকাশ ছুঁয়েছে। ক্যালেন্ডারের পাতায় বসন্ত চলে এলেও শীত এখনো গুঁটিসুঁটি মেরে আছে চারিদিকে। একটা দু’টা গাছের দালে অল্প কিছু ছোট ছোট নতুন পাতা উঁকিঝুঁকি মারছে।
আমার হঠাৎ দাদুর বাড়ির কথা মনে পড়ে।
নতুন ধান গজানো ক্ষেতের মাঝখানের মাটির আইল ধরে দু’হাত ডানার মত ছড়িয়ে দিয়ে দৌঁড় মারতে ইচ্ছা করে, যেনো দৌঁড় দিলেই আমার হাত দু’টো বদলে গিয়ে ডানা হয়ে যাবে, আমি যেনো তখন পাখি হয়ে সবুজ ক্ষেতে ক্ষেতে উড়ে বেড়াবো……
বড্ড বেশী অন্যমনস্ক ছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করতে শুনলাম ও বলছে, ‘…… ভাগ হয়ে যাওয়াটাই আসলে স্বাভাবিক ছিলো। কারন দুই দেশের মানুষই এত ডিফরেন্ট! কালচার, ল্যাঙ্গুয়েজ, নেচার… এভরি সিংগল থিঙ্ক।’
পাকিস্তান-বাংলাদেশ ভাগ হয়ে যাওয়ার কথা বলছে বুঝতে পেরে মনযোগী হয়ে মাথা নাড়লাম, ‘হুম’।
-কিন্তু ভাগ হয়ে জাওয়ার প্রক্রিয়াটা ঠিক ছিলনা। ইট ওয়াজ আ ব্লাডি টাইম। তুমি জানো, আমার আব্বা তখন এয়ারফোর্সে। হঠাৎ করে সব বাংলাদেশী অফিসারদেরকে একটা পরিত্যাক্ত ক্যাম্পে গৃহবন্দী করে ফেলা হল। ওখানে অনুমতি ছাড়া কেউ যেতে পারতোনা। কিন্তু আব্বা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে ওনার বাংগালী কলিগদের সাথে দেখা করতে ক্যাম্পে চলে যেতেন। ইট ওয়াজ আ গ্রেট রিস্ক ফর হিম, ইভেন ফর আস। বাট হি ওয়াজ ফেয়ারলেস টু স্ট্যান্ড এগেইনস্ট দ্যা গভার্নমেন্টস’ ব্লাডি ডিসিশান।’
ও উর্দূ ছেড়ে ইংলিশ বলা শুরু করে।
আমি মাথা নাড়ি। ম্লান হাসি। বলি, ‘আমি নিজেও ব্যাক্তিগতভাবে অনেক পাকিস্তানীকে জানি যারা তখন পাকিস্তান সরকারের অন্যায্য সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়নি। কিন্তু আসতে তাতে কিছু আসে যায়না। কারন পাকিস্তান আর্মি আমাদেরকে নির্বিচারে মেরেছে। আমাদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। আমাদের মেয়েদেরকে গনহারে রেপ করেছে। তাই যে কোনো বাংলাদেশী মন থেকে পাকিস্তানীদেরকে ঘৃনা করে।’
ততক্ষনে আমরা সিগন্যালে এসে দাঁড়িয়েছি।
- কিন্তু তুমি নিজেও জানো এই যুদ্ধের পিছনে ইন্ডিয়ার অনেক বড় ষড়যন্ত্র ছিলো’। কিছুটা অসহায়ের মত যেনো শেষ রক্ষা করতে চাইল সে।
- তাতেও আসলে কিছু আসে যায়না। সাধারন মানুষ সাফার করেছে। নিজেদের আত্নীয় স্বজনকে চোখের সামনে মরতে দেখেছে, অথচ ভয়ে কাঁদতে পর্যন্ত পারেনি। তোমার কি মনে হয় এসব আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র- অষড়যন্ত্রে তাদের কিছু আসে যায়? মোটেও না। তাছাড়া ইন্ডিয়া ষড়যন্ত্র করেছে, কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত করেছো তোমরা। সাধারন মানুষ তাই তোমাদেরকেই চিনে।’
ও চুপ করে থাকলো।
আমরা আবার সিগন্যাল পেরিয়ে অন্য একটা পুরাতন রাস্তায় চলে এসেছি। অনেকেই আমাদের মত হাঁটতে বের হয়ে গিয়েছে অনেকদিন পর ঠান্ডার ভিতর হালকা রোদের ওম পেয়ে। সেই সাথে মৃদু বাতাস। বেশ ভালো লাগছে।
- আসলে পাকিস্তানী সরকারের অনেক আগেই বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিলো’। হঠাৎ বলে উঠলো ও।
আমি থমকে দাঁড়ালাম।
ও ফিক করে হেসে ফেললো আমার রিএকশান দেখে। একটু পর বললো- ‘সব পাকিস্তানীরাই বর্বর, রক্তপিপাসু না যেমনটা তোমরা ভাবো। আমার বাবা নিজে ছিলেন যুদ্ধবিরোধী, বিশেষ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধেতো বটেই। আমি নিজেও যে কোনো ধরনের যুদ্ধবিরোধী। পৃথিবীতে একসময় যুদ্ধের প্রয়োজন ছিলো অস্তিত্বরক্ষার খাতিরে। কিন্তু সময়ের পর্যায়ক্রমে সে প্রয়োজন এখন ফুরিয়েছে। যুদ্ধ এখন আদিম ধারনা। আমি একজন পাকিস্তানী হিসেবে ব্যাক্তিগতভাবে তোমার কাছে ক্ষমা চাই ১৯৭১ সালের জন্যে। জানি ক্ষমা চাইলেই সব ঠিক হয়ে যাবেনা। তারপরও এখন ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কিইবা করতে পারি?’
আমি কী বলবো ভেবে পেলামনা।
একটা সিম্পল ইভিনিং ওয়াক যেনো আমাদের দু’জনকে আমাদের দেশ, সীমানা আর সামাজিক সব শেকল ছিঁড়ে অনেক অনেক দূড়ে নিয়ে এসেছে। খেয়াল করলাম বাতাস আস্তে আস্তে ঠান্ডা হচ্ছে। গায়ের ওভারকোটটা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘চলো ফিরে যাই’।
-তুমি জানো আমি কেনো পাকিস্তান ফিরে গিয়ে বেশীদিন থাকতে পারিনা?
-কেনো?’ বেশ আগ্রহ নিয়েই জিজ্ঞেস করলাম।
-কারন ওয়েষ্টে যে কোনো দেশে আমি রাস্তাঘাটে হেঁটে যে মজা পাই, যেভাবে ইচ্ছামত হাঁটতে পারি, আমার দেশে কখনোই তা পারিনা। একবার করাচীতে……’
ও বলেই যাচ্ছে। কিন্তু ওর কথার ঘোরেই যেনো আমি তখন চলে গেছি চট্রগ্রামে।
-আম্মা একটু হাঁটতে যাই।
-এত ভোরে?!
-হ্যাঁ, মানুষতো ভোরেই হাঁটে।
-দেখো, ছেলেদেরই হাঁটার নিরাপত্তা নাই, তুমি কেমনে হাঁটবা? এতভোরে রাস্তাঘাটে হাইজ্যাকার নেশাখোররা থাকে। যা পাবে ছিনায়ে নিবে। আর কিছু না পেলে ছুরি মেরে দিবে। তারউপর একলা মেয়ে দেখলেতো কথাই নাই।
……………
অথবা কোনো বিকেলে-
-আম্মা, এমনে একটু হাঁটতে বের হই।
-এমনে হাঁটতে যাবা মানে? রাস্তায় কেনো, ছাদে গিয়ে হাঁটো।
-আরে আশ্চর্য্য, ঐ একটুখানি ছাদে হাঁটা যায় নাকি? আর ছাদে গেলে ঐ পাশের কন্সট্রাকশানের কাজ চলতেছে যে বিল্ডিংটাতে ওটার শ্রমিকগুলা তাকায়ে থাকে, শিষ দেয়।
-তাহলে কোথাও যাওয়ার দরকার নাই। রাস্তাঘাটে এমনে এমনে ঘুরবা আর মানুষজন তোমার বাপের নামে বলবে ওনার এত বড় ধিংগী মেয়েটা রাস্তাঘাটে ঘুড়ে বেড়ায়……
…………………
-এই কী ভাবছো?
ওর হালকা ধাক্কায় চট্রগ্রামের সেই দমবন্ধ ভোর আর বিকেল থেকে একলাফে ফিরে আসি সিডনীর পড়ন্ত দুপুরে।
-উঁহু, কিছুনা। আমার হাঁটতে খুব ভালো লাগছে।’ গায়ের ওভারকোটটার হাতার ভিতর হাত গুটিয়ে আরাম করে হাঁটতে হাঁটতে পিছনের দিনগুলো ম্লান হয়ে আসে।
ও হাসে।
-বলেছি না? এখানে তুমি যে ড্রেসই পড়ো, হাঁটো বা দৌঁড়াও, যা ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা করো, কেউ তোমার দিকে ফিরেও তাকাবেনা। বেশ স্বস্তিদায়ক। ইউ ক্যান জাস্ট ফীল ইউরসেলফ, দ্যা ফিলিংস অব বিয়িং সেলফ অনলী, বিয়োন্ড বিয়িং আ গার্ল অর আ বয়।
আমি মাথা নাড়ি।
ও কথা বলেই যায়।
হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছি বুঝতে পারছিলাম না। রাস্তাটা বেশ পুরানো। পুরানো, কিন্তু অভিজাত। রাস্তার একপাশে সব ডুপ্লেক্স আর অন্যপাশে বিশাল বিশাল গাছের সারি। উপরে মাথা বাঁকিয়ে তাকালে মনে হয় গাছের ডালগুলো যেনো আকাশ ছুঁয়েছে। ক্যালেন্ডারের পাতায় বসন্ত চলে এলেও শীত এখনো গুঁটিসুঁটি মেরে আছে চারিদিকে। একটা দু’টা গাছের দালে অল্প কিছু ছোট ছোট নতুন পাতা উঁকিঝুঁকি মারছে।
আমার হঠাৎ দাদুর বাড়ির কথা মনে পড়ে।
নতুন ধান গজানো ক্ষেতের মাঝখানের মাটির আইল ধরে দু’হাত ডানার মত ছড়িয়ে দিয়ে দৌঁড় মারতে ইচ্ছা করে, যেনো দৌঁড় দিলেই আমার হাত দু’টো বদলে গিয়ে ডানা হয়ে যাবে, আমি যেনো তখন পাখি হয়ে সবুজ ক্ষেতে ক্ষেতে উড়ে বেড়াবো……
বড্ড বেশী অন্যমনস্ক ছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করতে শুনলাম ও বলছে, ‘…… ভাগ হয়ে যাওয়াটাই আসলে স্বাভাবিক ছিলো। কারন দুই দেশের মানুষই এত ডিফরেন্ট! কালচার, ল্যাঙ্গুয়েজ, নেচার… এভরি সিংগল থিঙ্ক।’
পাকিস্তান-বাংলাদেশ ভাগ হয়ে যাওয়ার কথা বলছে বুঝতে পেরে মনযোগী হয়ে মাথা নাড়লাম, ‘হুম’।
-কিন্তু ভাগ হয়ে জাওয়ার প্রক্রিয়াটা ঠিক ছিলনা। ইট ওয়াজ আ ব্লাডি টাইম। তুমি জানো, আমার আব্বা তখন এয়ারফোর্সে। হঠাৎ করে সব বাংলাদেশী অফিসারদেরকে একটা পরিত্যাক্ত ক্যাম্পে গৃহবন্দী করে ফেলা হল। ওখানে অনুমতি ছাড়া কেউ যেতে পারতোনা। কিন্তু আব্বা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে ওনার বাংগালী কলিগদের সাথে দেখা করতে ক্যাম্পে চলে যেতেন। ইট ওয়াজ আ গ্রেট রিস্ক ফর হিম, ইভেন ফর আস। বাট হি ওয়াজ ফেয়ারলেস টু স্ট্যান্ড এগেইনস্ট দ্যা গভার্নমেন্টস’ ব্লাডি ডিসিশান।’
ও উর্দূ ছেড়ে ইংলিশ বলা শুরু করে।
আমি মাথা নাড়ি। ম্লান হাসি। বলি, ‘আমি নিজেও ব্যাক্তিগতভাবে অনেক পাকিস্তানীকে জানি যারা তখন পাকিস্তান সরকারের অন্যায্য সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়নি। কিন্তু আসতে তাতে কিছু আসে যায়না। কারন পাকিস্তান আর্মি আমাদেরকে নির্বিচারে মেরেছে। আমাদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। আমাদের মেয়েদেরকে গনহারে রেপ করেছে। তাই যে কোনো বাংলাদেশী মন থেকে পাকিস্তানীদেরকে ঘৃনা করে।’
ততক্ষনে আমরা সিগন্যালে এসে দাঁড়িয়েছি।
- কিন্তু তুমি নিজেও জানো এই যুদ্ধের পিছনে ইন্ডিয়ার অনেক বড় ষড়যন্ত্র ছিলো’। কিছুটা অসহায়ের মত যেনো শেষ রক্ষা করতে চাইল সে।
- তাতেও আসলে কিছু আসে যায়না। সাধারন মানুষ সাফার করেছে। নিজেদের আত্নীয় স্বজনকে চোখের সামনে মরতে দেখেছে, অথচ ভয়ে কাঁদতে পর্যন্ত পারেনি। তোমার কি মনে হয় এসব আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র- অষড়যন্ত্রে তাদের কিছু আসে যায়? মোটেও না। তাছাড়া ইন্ডিয়া ষড়যন্ত্র করেছে, কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত করেছো তোমরা। সাধারন মানুষ তাই তোমাদেরকেই চিনে।’
ও চুপ করে থাকলো।
আমরা আবার সিগন্যাল পেরিয়ে অন্য একটা পুরাতন রাস্তায় চলে এসেছি। অনেকেই আমাদের মত হাঁটতে বের হয়ে গিয়েছে অনেকদিন পর ঠান্ডার ভিতর হালকা রোদের ওম পেয়ে। সেই সাথে মৃদু বাতাস। বেশ ভালো লাগছে।
- আসলে পাকিস্তানী সরকারের অনেক আগেই বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিলো’। হঠাৎ বলে উঠলো ও।
আমি থমকে দাঁড়ালাম।
ও ফিক করে হেসে ফেললো আমার রিএকশান দেখে। একটু পর বললো- ‘সব পাকিস্তানীরাই বর্বর, রক্তপিপাসু না যেমনটা তোমরা ভাবো। আমার বাবা নিজে ছিলেন যুদ্ধবিরোধী, বিশেষ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধেতো বটেই। আমি নিজেও যে কোনো ধরনের যুদ্ধবিরোধী। পৃথিবীতে একসময় যুদ্ধের প্রয়োজন ছিলো অস্তিত্বরক্ষার খাতিরে। কিন্তু সময়ের পর্যায়ক্রমে সে প্রয়োজন এখন ফুরিয়েছে। যুদ্ধ এখন আদিম ধারনা। আমি একজন পাকিস্তানী হিসেবে ব্যাক্তিগতভাবে তোমার কাছে ক্ষমা চাই ১৯৭১ সালের জন্যে। জানি ক্ষমা চাইলেই সব ঠিক হয়ে যাবেনা। তারপরও এখন ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কিইবা করতে পারি?’
আমি কী বলবো ভেবে পেলামনা।
একটা সিম্পল ইভিনিং ওয়াক যেনো আমাদের দু’জনকে আমাদের দেশ, সীমানা আর সামাজিক সব শেকল ছিঁড়ে অনেক অনেক দূড়ে নিয়ে এসেছে। খেয়াল করলাম বাতাস আস্তে আস্তে ঠান্ডা হচ্ছে। গায়ের ওভারকোটটা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘চলো ফিরে যাই’।
পড়তে পড়তে কোথায় যেন হারিয়ে গেছিলাম আপনার লেখা। অনেক বিচ্ছিন্ন ভাবনা মাথায় এখনো ঘুরছে।
ReplyDeleteখুব বেশি রাত হলে বাইরে যাবেন না আপু,
সিডনীর রাস্তাঘাটকে আবার রাত্রে বেশি বিশ্বাস করা যায়না। অনেক অপরাধ, দূর্ঘটনা ইত্যাদি রাত্রেই হয় এখানে। তাই রাত্রে বাইরে গেলে সাবধানে থাকাই ভাল।
আমাদের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতার সংগ্রামের পাকিস্তানি জানোয়ারদের জন্য আমাদের যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তা আমরা কখনোই ভুলতে পারবোনা। তাই বোধকরি কোনো পাকিস্তানি আজ ফুল নিয়ে এলেও আমরা সন্দেহের চোখে তাকাই। আমার পাকিস্তানী এক বন্ধু আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, তুমি কি আমাকে ঘৃণা কর ১৯৭১ এর ঘটনার জন্য ? আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিলাম- মানুষকে কখনোই ঘৃণা করিনা, করা উচিতও নয়। তবে তাদের কর্মকে ঘৃণা করে যাব, আজীবন। ওর মুখে তখন উত্তর ছিলনা কিছু বলার।
ধন্যবাদ টক্স।
ReplyDeleteরাতে বের হই, তবে একলা না। তখন সবাই একসাথে গাড়ি নিয়ে বের হই। কারন দিনে সবার কাজ। রান্নাবান্নার বাজার থেকে শুরু করে সব কাজ রাতের জন্যেই জমা থাকে বলতে গেলে।
ami onek koshte fire ashchi jekhane hariye giyechilam. ki je likhle tar jora lagate parchina. puzzle hoye gelam api. amio rate ber hoi. shokale shoabr kaj. puro poribarer ektu shanti mile rate...tai rate ektu shantir neer khujte ber hoye pori. tomar likha onek kichu mone koriye dilo. shabdhane theko api :d
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ মিনা'পু মন্তব্যের জন্যে। টক্স আর আপনি দু'জনেই যেভাবে সাবধান করে দিচ্ছেন, সাবধান তো থাকতেই হবে দেখি! ;)
ReplyDeleteহেঃ হেঃ হেঃ
ReplyDeleteমিনা তো অস্ট্রেলিয়ায় থাকেইনা। আমেরিকাতেও মনেহয় রাত্রে বেশি সুবিধার না মনে হইতাছে।
তবে রাতে বেরোতে মানা করেছি ঠ্যাঁক পার্টির জন্য। আর আইল্যান্ডার গুলার একটা ঘুষি খাইলে ফারজানা আপুকে আর পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবেনা। (অন্য কোনো মহাকাশে পাইলেও পাওয়া যেতে পারে!!!)
মিনা আপনার বয়সীই হবে আমার মনেহয়। আপু বইলেন না। হিঃ হিঃ হিঃ।
না টক্স ভাই, আমি বাবা সবাইকেই আপু ভাইয়া বলি। যে বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে একবার একজনকে তুমি বলতে গিয়ে! সে অনার্সে পড়ে শুনে তুমি করে বলা শুরু করছি। তারপর দেখা গেলো সে আমার দুইবছর আগে ইন্টার দিছে। কিন্তু যেহেতু আমি ক্রেডিট বেশী নিয়ে নিয়ে খুব অল্প সময়েই অনার্স মাস্টার্স শেষ করে ফেলছি আর প্রাইভেট ইউনিতে তো সেশন জট নাই, সে পড়ে পাবলিক ইউনিতে, তাই সে এখনো অনার্সে। শেষে ঐ ভদ্রমেয়ে খুব কঠিন ভাষায় আমাকে বলছিলো- 'মাস্টার্স করে ফেললেই তো আর সবাইকে তুমি বলে বলার রাইট জন্মায়না!'
ReplyDeleteবাপরে বাপ! ঐ একবারই ভুল করছিলাম (আমার দোষ নাই, ঐ মেয়ের চেহারাও বাচ্চা বাচ্চা টাইপ ছিলো), ঐবারই ঝাড়ি খাইছি! আগেও কাউকে তুমি বলতামনা, এখনো বলিনা।
আমার তো মনে হয় আপনিও আমার চে' ঢের গুন বড় হবেন!
হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ
ReplyDeleteআপনার মন্তব্য শুনে হেসে নিলাম কিছুটা।
না আপু আমি আপনার চেয়ে দু'বছরের মতন ছোট।
বড় হবার তো প্রশ্নই আসেনা। নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আপনি আমার চেয়ে দু'বছর আগে ইন্টার পাশ করেছেন। কি বুঝলেন ? আর পিচ্চি মনে করার বিড়ম্বনাটা আমার এখনো সইতে হয়। এখানে সবাই আমাকে স্কুল স্টুডেন্ট এখনো মনে করে। বয়স ধরে নেয় আরকি ১৭/১৮। কয়েকদিন আগে পর্যন্তও আমাকে চাইল্ড কন্সেশনের কথা জিজ্ঞেস করতো সিটিরেইলে টিকিট কাটতে গেলে কাউন্টারে। তাহলেই ভাবুন !!! আর আমাকে তুমি বললেই খুশি হব।
আমি যে কোথায় হারাই, তা জানি না... পথ হতে পথে.. ভাবনা আড়ালে রেখে কখনো মুখোশ পড়ে...
ReplyDeleteকী অদ্ভূত কিছু অনুভূতি পেলাম!
ReplyDelete......
ভালো লাগে না কিছু :(