কয় গজে এক দূরত্ব?

........................

তোমার আর আমার মাঝখানের দুরত্ব এখন কতটুকু হবে? এই গজ ফিতাটা দিয়ে মাপলে? আম্মুকে ছোটবেলায় দেখেছি হাত দিয়ে শাড়ি মাপতে। দুই হাতে এক গজ।একটা শাড়ি সাধারনত বারো হাত হয়। আমি যদি দুই হাত দিয়ে দিয়ে মেপে মেপে যাই ঠিক কতদূর গেলে তোমাকে ছুঁতে পারবো?

এখান থেকে আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা। একবার মধ্যদুপুরে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মনে হল রাস্তাটা উঁচু হচ্ছে। হতে হতে একসময় মনে হল এটা আর রাস্তা নেই, হয়ে গেছে আকাশে উঠার সিঁড়ি। আমার তখন খুব তেষ্টা পেলো। ক্লান্ত লাগলো। আকাশের সিঁড়ি বাওয়া তো চাট্টিখানি কথা নয়, তাই পাশে উঁচু মত একটা জায়গায় বসে পড়লাম। পাশ দিয়ে দু’টো ছেলে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল। ওরা বলল- ‘রাস্তায় বসে আছেন যে?’ … এটা কি রাস্তা?! তবে যে আমার কাছে মনে হয়েছিল এটা আকাশে উঠার সিঁড়ি?
নিজের ভুল দেখে অবশ্য আমার আর অবাক লাগেনা। কারন আমার হিসেবে বরাবরই গড়মিল থাকে। তাই এই সহজ হিসাবটা বরং তুমিই করে দাও। ঠিক কয় গজ? যত দুরত্বই হোক, আমি ঠিক পেরিয়ে যাবো একসময়। তোমাকে ছুঁতে হবে যে! ঐ যে টাইটানিকে দেখোনি? ওরা দু’জন কেমন পাখির মত জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে হাতদু’টো ডানার মত ছড়িয়ে দিয়েছিল? চট্রগ্রামের মোমিন রোড মোড় থেকে সেন্টমেরিসের রাস্তাটায় রিকশা যখন উপর থেকে গড়িয়ে নামে, আমরা না হয় তখন রিকশার ডেকে দাঁড়িয়ে দু’হাত অমন পাখির মত করে দিয়ে উড়ে যাব…… সবাই তাকিয়ে থাকবে? তাতে কী? তুমি কি সবার তাকানোকে ভয় পাচ্ছো? আচ্ছা, তোমার আপত্তি থাকলে বাদ। কিন্তু এখন তোমার আমার মাঝখানের এই রাস্তাটাকে কী মনে হচ্ছে জানো? ঐ যে ইংলিশ মুভিতে দেখায় না? বরফ পড়ে সাদা হয়ে থাকে পুরো রাস্তা। নায়িকা বিহবল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তার একপ্রান্তে। তারপর কুয়াশার মত বরফের উপরের সাদাটে ধোঁয়াশা পর্দা ভেদ করে নায়ক আসে আস্তে আস্তে। নায়িকাটা কয়েক পা হাঁটে দ্বিধান্বিত। তারপর দৌঁড় মারে। একদম হুশবুশ ছাড়া দৌঁও-ও-ও-ড়। আমি কী অমন একটা দৌঁড় দিব? নাহ বাদ দাও। ওভাবে দৌঁড় দিলেও সেইতো সবাই তাকিয়ে থাকবে। আমি না হয় তাই হেঁটে হেঁটেই আসব।

হাঁটতে হাঁটতে দুপুর হয়ে যাবে? তাতে কী? রোদ কি আমাকে খেয়ে ফেলবে? ফ্রক পড়ার কালে কত দুপুর আমি আর সেতু স্কুল থেকে হেঁটে হেঁটে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে বাসায় ফিরেছি। দু’জনের টিফিনের দুই’টাকা মিলিয়ে একটা আইস্ক্রিম কিনতাম। অর্ধেক ও খেতো অর্ধেক আমি।……এখন অবশ্য আমি ঠিক আইস্ক্রিম খেতে খেতে আসলে মানাবেনা। যদিও আমার কিন্তু খুব মন চাইছে। আইস্ক্রিমের সাথে মাথার চুলের খোঁপাটা খুলে দুই বেনী করে নিলে মন্দ হয়না। বালিকা আইস্ক্রীম খাইতে খাইতে তাহার মাথার দুই বেনী দুলাইয়া দুলাইয়া স্কুল হইতে ঘরে ফিরিয়া চলিল। না হয় নি, আমি তো স্কুল থেকে ঘরে যাবোনা। ঘর থেকে তোমার কাছে যাবো… কিন্তু তোমার কাছে এসব নাটক ভালো লাগবেনা আমি জানি। তাই থাক। আমি বরং খালি হাতেই আসবো। বেণীর বদলে খোঁপা করেই আসবো। আর যখন তোমাকে ছুঁয়ে ফেলবো তখন ঐ মিউজিক এন্ড লিরিক্স’র নায়ক নায়িকার মত নিজেরা গান আর সুর বাঁধতে বাঁধতে নাঁচবো। তুমি নাঁচতে জানোনা? আমিও তো জানিনা! কিন্তু জানো, আমার খুব শখ নাঁচার। ঠিক ঐভাবে তোমার কাঁধে হাত রেখে। তুমি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরবে। সবচে ভাল হয় স্পট লাইটের বদলে তখন যদি আমাদের দু’জনের উপর গোল হয়ে জোছনা পড়ে। আশে পাশে দল বেঁধে কিছু জোনাকি উড়লে আমি মাইন্ড করবনা।……… সম্ভব না? আমিতো জানি সম্ভব না। তবে ছোটবেলায় রহিমা আমাকে অনেক জোনাকী ধরে দিত। ধরে ধরে দাদুর কাছ থেকে চুরি করা একটা বয়ামে ভরে দিত। অনেকগুলো ধরা হলে আমরা চুপি চুপি আধো অন্ধকার উঠানে বেড়িয়ে যেতাম। ঠিক উঠানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বয়ামের মুখটা খুলে দিতাম। আর হু হু করে জোনাকীরা উদ্ভ্রান্তের মত একসাথে বের হয়ে দিশা না পেয়ে আমাদেরকে ঘিরেই উড়তো কিছুক্ষন। এই ধরো বড়জোড় দশ বা বারো সেকেন্ড। অথচ সেই দশ সেকেন্ড আমার কাছে এখনো এক জীবন। ঐ এক জীবনে আমি একলাই নায়িকা। নিজেকে মনে হত জোনাকি-বালিকা। আমাকে ঘিরে জোনাকীরা উড়ছে! অন্ধকার উঠান, রহস্যময় রাত, আর জোনাকীগুলো আমার কাছে মোহনীয় লাগতো।...…

জোনাকী বালিকা থেকে নগর বালিকা হওয়াটা আসলে বেশ কঠিন। অথবা হতে পারে এটাও এক ধরনের কঠিন দেখানোর নাটক। নাটক হোক আর যাই হোক, আমি কিন্তু চেষ্টার ত্রুটি করিনি। এই দেখো, ঠিক নগর-বালিকাদের মতই ভদ্রস্থ হয়েই আছি। অন্তত চেষ্টা তো করছি। তারপরো কেন এই ভদ্রস্থ আমি তোমার কাছে পৌঁছুতে পারিনা?

কুছ কুছ হোতা হ্যায় তে কাজলকে দেখেছো ঐ যে খেলার মাঠে রানী মূখার্জীকে দেখে ছেলেমী বাদ দিয়ে রমনীয় ভংগিতে বসার যারপরনাই চেষ্টা করে? যখন আমি ভদ্রস্থ হই, যখন আমি বুঝি এবার আমার চুপ থাকা উচিত, তখন আমার ঐ সিনটার কথা মনে পড়ে। সমস্যা হল আশে পাশের কোনো রানী মূখার্জীকেই আমার পছন্দ নয়। আচ্ছা কাজল কাজলই থাকুক না। ওকে কেন ঐ মুভির শেষে গিয়ে রানী মূখার্জী হয়ে যেতে হল? আমরা সবাই আসলে শেষ দৃশ্যে বদলে যাই। না বদলালে চলবে নাকি? এক সময় মনে হত না চলুক। না চললে বসে থাকবো। কিন্তু এখন মনে হয়, না চললে এই সামনের রাস্তাটা পেরিয়ে তোমার কাছে যাবো কী করে? আর তোমার কাছে না গেলে তো আমার অতগুলো ইচ্ছে মাঠে মারা যাবে! তা কি হয়?
আচ্ছা, এই শেষবার। প্রমিজ। মেপে দাওনা প্লীজ!

Comments

  1. পাঠ করলাম। অতি উচ্চাঙ্গের সাহিত্য। সাফল্য কামনা করছি।


    মন্তব্য লিখতে এত ঝামেলা??

    ReplyDelete
  2. বেশী ঝামেলা? ;(

    ReplyDelete
  3. কমেন্ট করাটা আসলেই অনেক ঝামেলার । ওয়ার্ড ভেরিফিকেশনটা বন্ধ করে দিলে কি হয়? ;-((

    ReplyDelete
  4. বন্ধ করে দিলাম। ;)

    ReplyDelete
  5. আবারো পড়লাম ফারজানা আপু, ভালই লাগল।

    ওয়ার্ড ভেরিফিকেশন বন্ধ করার জন্য শুকরিয়া জানাই।

    ReplyDelete
  6. ওয়াড ভেরিফিকেশনের উপকারিতা কি?

    ReplyDelete
  7. এত উচ্চাঙ্গের সাহিত্যে কি বলা যায় বুঝিনা... :( তাও হলদে ডানা ধরায়া দিসিলো বইলা বুঝতে পারছি যে এটারে অতি উচ্চাঙ্গের সাহিত্য বলে... প্লাস মাইনাসের সিষ্টেম ও নাই, থাকলে প্লাস দিয়া বলতে পারতাম , প্লাস...

    ReplyDelete

Post a Comment