বৃষ্টি তুই থামিসনারে


মাঝে মাঝে ইচ্ছেগুলো এত প্রবল হয়ে যে মাথা পুরা আওলা হয়ে যায়। পৃথিবীর যে কোনো মূল্যে তখন ইচ্ছেটাকেই পেতে ইচ্ছে করে। এখন এই গরমের শুরুতে আমি এখন ঝুম বৃষ্টি কোথায় পাই? কিন্তু ঝুম বৃষ্টি যে এখন আমার যে কোনো মূল্যে চাইই চাই। মনটা খারাপ হতে শুরু করে। প্রথমে একটু। তারপর আস্তে আস্তে প্রবল মন খারাপ। ফূল ভল্যুমে শাফিনকে গলা সাধার অনুমতি দিয়ে কানের পর্দা ফেটে ফেলার অবস্থা করেও মনকে ভুলানো গেলনা। শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে কলকে মুচড়ে দিলাম একদম পুরোপুরি। ঝরঝর করে নেমে এলো এক ঝর্ণা পানি। কিন্তু অনেক্ষন দাঁড়িয়ে থেকেও যে বৃষ্টি বৃষ্টি লাগেনা! হতাশ লাগে। আত্মা’র মত এই মনও এক রহস্যময় কিছু, কোনো কূলকিনারা পাইনা। চোখে পানি চলে আসে। এখন আমি বৃষ্টি কোথায় পাই? মায়ের জড়ায়ুর ভিতরে যেভাবে হাতপা গুটিয়ে থাকতাম, অনেকটা সেরকম করে বসে থাকি। হাটুর উপর রাখা দু’হাতের ভিতর মুখ লুকিয়ে চোখ বন্ধ করি। এবং তখনি টের পেলাম, যাদু! চোখ বন্ধ করতেই কান ধরে ফেলেছে ঝর্ণার পানিতে বৃষ্টির ঝর ঝর শব্দ! মুহূর্তে আমি হয়ে যাই দাদুর বাড়ির উঠোনে। আকাশ ভাংগা বৃষ্টি বুঝি একেই বলে! দাদুর বকা’র শব্দ শুনি আবছা। ওপাশের বড়দাদুর বাড়ি থেকে চাচীর ধমকের আওয়াজও যেন শুনি। বৃষ্টিতে ভেজার সাথে ধমকের আলাদা একটা মধুর সম্পর্ক টের পাই। যেন কেউ একজন ঠান্ডা লাগবে ভেবে উৎকন্ঠিত হয়ে বকা দিচ্ছে বলেই বৃষ্টিতে ভিজতে আরো ভাল লাগে। মানুষে মানুষে ভালবাসাগুলো যেন বৃষ্টির একএকটা ফোঁটা। মাটিতে পরে মিশে যাওয়ার আগেই আমার আকন্ঠ শুষে নিতে মন চায়। আমি পাখির ডানার মত দু’হাত মেলে দিয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে ভিজি। চোখের পাতা বেয়ে বৃষ্টির ধারা নামে। চুলের ভিতর দিয়ে গাল ভিজে কানের পাশ দিয়ে গলা বেয়ে বৃষ্টির ধারা নামে। দু’বেণীর আগা বেয়ে বৃষ্টির ধারা নামে। দু’হাতের মধ্যমা আঙ্গুল বেয়ে বৃষ্টির ধারা নামে। চোখ না খুলেই কীভাবে যেন বুঝতে পারি আমি একটা লাল পাড় হলুদ শাড়ি পড়ে আছি! কেমন যেন গায়ে হলুদের শাড়ির মত। অবাক লাগে। আমার তো শাড়ির প্রতি তেমন কোনো আগ্রহ নেই। এখন যে তবে বৃষ্টিতে শাড়ি পড়ে ভিজছি! আচ্ছা আজ কি আমার গায়ে হলুদ? হলেও হতে পারে। চোখ বন্ধ করেই আমি মৃদু হাসি। ঠোঁটের কোনায় বৃষ্টি টের পাই। কপালে বৃষ্টি টের পাই। নাকের উপর বৃষ্টি টের পাই। চিবুক বেয়ে নামা বৃষ্টি টের পাই। আমার ভাল লাগে। বৃষ্টি তুই থামিস না। তুই না থামলে আমারো যে বয়স বাড়বেনা। জীবন বাড়বেনা। আমি এখানে এই ঝুম ঝুম বৃষ্টিতে গায়ে হলুদের শাড়ি পড়া দু’বেনী করা আমিই রয়ে যাব। কখনো স্থূল দেহের মধ্য বয়সী নারী হবনা। কখনো চুলে পাক ধরা মাজা ভাঙ্গা বুড়ি হবনা। তুই থামিসনা বৃষ্টি। আমাকে আমিই থেকে যেতে দে।
(ছবি কৃতজ্ঞতা-ইন্টারনেট)
আজকে গায়ে হলুদ??
ReplyDeleteএই অসময়ে হঠাৎ বৃষ্টি নিয়া পোস্ট দেখে তাজ্জব হয়া গেলাম...
আপু কি হইছে?
বরাবরের মতন হৃদয় ছোয়া লেখা... যেই কারণে আমার সবচাইতে প্রিয় ব্লগারদের শীর্ষস্থান বহু আগেই আপনার দখলে চলে গিয়েছে।
ঈদ মুবারক। :D
কাল সকালে আমাদের এখানে ঈদ, এখন রাত একটা। ভালো লাগলো এই সুন্দর সময়ে সুন্দর লেখাটা পড়ে......
বৃষ্টি???? হুমমমমম............ দেশ ছেড়ে আসার পর এই বৃষ্টিই একমাত্র জিনিস, যার অভাব অনুভব করিনি আমি! বরং দেশেই এই বৃষ্টির অভাব অনুভব করছিলাম। কারণ, ২-৩ মাস টানা কোন বৃষ্টি হচ্ছিলনা। বাংলাদেশের মতন নদীমাতৃক দেশেও যে বৃষ্টি এতদিন ধরে হয়না তা বেশ বিস্ময়কর এক ঘটনা। তার চাইতেও বিস্ময়কর ঘটনা হল এই যে, আষাঢ় মাস পার হয়ে শ্রাবণ চলছিলা তারপরও বৃষ্টির দেখা নেই!!! এরপর চলে এলাম এই দুরদেশে। এই দেশ ১ম দিনেই আমাকে এক ঝড়ঝড়ে বৃষ্টি উপহার দিয়েছে যা আমি ২-৩ মাস পাইনি। এ জন্য প্রবাস জীবনের ১ম দিন চিরদিনের জন্য গেঁথে থাকবে আমার হৃদয়ে। এরপর আস্তে আস্তে দিন কেটে গেল। দেখতে দেখতে ৩ মাস পার হয়ে গেল। কিন্তু কখনোই বৃষ্টির অভাব অনুভব করিনি। বৃষ্টি হয়নি এমন দিন খুঁজে পাওয়া আসলেই কষ্টকর!!! এখানে আসার পর ইউনির এক ভাইয়া আমাকে বলেছিলেন-
ReplyDelete“এই দেশে প্রতিদিনই ৩টা ঋতু দেখতে পাবা। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মারাত্মক গরম- সূর্যের উত্তাপে চামড়া পুড়ে যায় যায় অবস্থা- মানে গ্রীষ্ম, সন্ধ্যা থেকে সারারাত হল কনকনে ঠাণ্ডা পরিবেশ- মানে শীত, আর এই শীত-গ্রীষ্মের মাঝেই সকালে/বিকালে/রাতে যে কোন এক সময় ঝড়ঝড়ে টানা একটা বৃষ্টি- মানে বর্ষা।“
ভাইয়ার এ কথা শুনে আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম- “এও কি সম্ভব???”
পরে দেখলাম আসলেই সম্ভব। প্রতিদিন এই রীতিই পালন করে যাচ্ছে এ দেশের প্রকৃতি। আমাদের ইউনিটা পাহাড়ে ঘেরা। যখন বৃষ্টি হয়, তখন চারদিকের পাহারগুলোর অর্ধেকই মেঘে ঢেকে যায়। ১ম দিন এই দৃশ্য দেখে তো আমি মনে হয় হাআআআ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম প্রায় আধা ঘণ্টার মতন!!! মেঘ এত্তো নিচে নামে নাকি??? আগে তো দেখিনাই কোনদিন এমন দৃশ্য!!! যে মেঘে ঢেকে গিয়েছে পাহাড়ের অর্ধেক, মেঘগুলা এমনভাবে নিচে নামতে থাকে মনে হয়ে যেন প্লেন ল্যান্ড করতেছে রানওয়েতে!!! এরপর নামতে নামতে মেঘগুলো এত্তোই নিচে নেমে আসে যে, মনে হয় যেন হাত দিয়ে ধরা যাবে!!! আমাদের সবগুলো হোস্টেলই ৪তলা। মাঝে মাঝে হোস্টেল এর মাথায় এসে মেঘ ল্যান্ড করে!!! মানে ৪তলা সমান উচুঁতে মেঘ!!! আসলেই নিজ চোক্ষে না দেখলে বিশ্বাসই হবেনা! এই ৪টা ফটো দেখলে বুঝতে পারবেন ইউনিটা কত্তো সুন্দর, পাহাড়ে ঘেরা এবং কেন বৃষ্টি হলে এই পাহাড়গুলোর অর্ধেকই মেঘে ঢেকে যায়---
http://farm1.static.flickr.com/73/199977252_37979d4b9c_b.jpg
http://lh5.ggpht.com/anuar.gani/Rvftgku7PWI/AAAAAAAAAdU/39EuHlm8tR8/IIUM%2001.jpg&imgmax=640
http://alumniirshad.net/iais/files/Picture1.jpg
http://berrymint.files.wordpress.com/2008/12/da-beautifulcompressed.jpg
অনেক কিছুই দেখলাম এই দেশের। দেখতে বলতে গেলে আমার দেশের চাইতেও সুন্দর। পরিবেশ খুবই চমৎকার, সবই বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কিন্তু কি যেন একটা নেই!!! মনে সুখ নেই, দেশের মতন এদেশের রাস্তায় এমন মানুষ নেই, আমি নিশ্চিত এদেশের কোন মানুষকে যদি ফার্মগেটের মোড়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে এত্তো মানুষ দেখে সাথে সাথে সে হার্টফেল করবে!!! আমার কাছে মনে হয়ে যে, এদেশের একটা এলাকায় যত মানুষ আছে, ফার্মগেটের মোড়ে তার চাইতেও ৩/৪ গুণ বেশি মানুষ আছে।
ReplyDeleteতারপর……… কোথাও যেতে হলে বাসস্টপে যেতে হয়। কারণ দেশের মতন এখানকার রাস্তায় তো আর রিকশা নেই যে রিকশাওয়ালা কে ডেকে বলব, “এই রিকসা যাবেন???” রিকশাই আমার সবচেয়ে প্রিয়, প্লেনের চাইতেও। রিকশার মতন এমন স্বাধীনতা প্লেনে নেই যে রিকশার মতন হুড ফেলে দিয়ে পা এর উপর পা তুলে মুক্ত হাওয়া-বাতাস খেতে খেতে যাব।
আরো অনেক কিছুই নেই....... তা মনে করলে কষ্টই বাড়বে শুধু.....
আপ্পি আপনার ইচ্ছে করতেছে বৃষ্টিতে ভিজতে...... ঠিক তেমনই আমার অনেক ইচ্ছা করতছে আমার ঐ ইচ্ছাটাকে যে কোন মূল্যে পেতে। কিন্তু তা আমি পেলামনা, পাব কিনা তাও জানিনা...... কি সেই ইচ্ছটা??? থাক, বলতেও ইচ্ছে করছেনা.......
শাফিনটা কিডা রে ?
ReplyDelete@Tox...... শাফিন হইল একডা পোলা......... কালা সানগেলাস, ঝাঁকড়া চুল..... রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে আর গান করে :-D
ReplyDelete& মনে হয় বাংলাদেশের ২য় ব্যান্ড তারকা, আযম খানের পর।