হলদে-সবুজ ঘাসের ডগায় সোনালী রোদের ইলিক-ঝিলিক কবিতা



(ছবি- ইউনি'র অন্যতম একটা প্রিয় জায়গা, যেখানে বসে সন্ধ্যে দেখতে অসাধারণ লাগে!)

সন্ধ্যে-বিকেল হতে হতে পুরো ক্যাম্পাস কেমন যেন নিরব হয়ে আসে। এত বিশাল ক্যাম্পাস তখন যেন গা এলিয়ে দিয়ে ঝিমুয়। কোথাও বসে আশে পাশে তাকালে এদিক-ওদিক হেঁটে যাওয়া কোনো স্টুডেন্ট/স্টাফ চোখে পড়লেও পরতে পারে। দূরে কোনো বড় গাছের নীচে একটা বা দু’টো গ্রুপে দল বেঁধে ছেলেমেয়েরা বসে, ওরাও যেন এসময় হৈচৈ ভূলে এলিয়ে পড়ে থাকে। কেউ আইপড কানে আকাশের দিকে তাকিয়ে শুয়ে, কেউবা বই কোলে, অথবা কেউ খুব মনযোগ দিয়ে মোবাইলে টেক্সট করছে কাউকে। পাখিদের ডাক আস্তে আস্তে স্পস্ট হতে থাকে। আর আমার কাছে ততই পুরো ক্যাম্পাসের লম্বা ছায়া ফেলে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো, মৃদু বাতাসের সাথে খেলতে থাকা পাতাদের সড়রর সড়ররর শব্দ, পাখিদের বিচিত্র সব ডাক মিলিয়ে সীমানা ছাড়া সবুজ ঘাসের অনন্ত মাঠ ক্রমেই দাদুর বাড়ির উঠান হয়ে যায়। আমি তখন বাতাসের গন্ধ পাই। পাতাদের কথা বলা শুনি। পাখিদের ঘরে ফেরার আনন্দ বুঝি। এমনকি হলদে-সবুজ ঘাসের ডগায় সোনালী রোদের ইলিক-ঝিলিক কবিতা পর্যন্ত দেখতে পারি!

অনেকটা এই দূর্লভ বিকেল আর সন্ধ্যে খাওয়ার লোভেই চাকরিটাও ছেড়ে দিলাম। ক’দিন আর বাঁচবো? কী লাভ এতো টেনশন নিয়ে? ধড়াম করে ব্যাংক-একাউন্টের পেট চুপসে গিয়ে সোজা তলানীতে ঠেকে গেলো! এই শান্ত সন্ধ্যে-বিকেলের প্রভাবেই যেন আমার সে তলানীও ভাল লাগে।

তারপর যখন ঘরে ফেরার সময় হয়ে যায়, কাপড় থেকে ঘাস ঝেড়ে উঠতে উঠতে, ব্যাগ-বই আর ছড়ানো ছিটানো মনটা গুছাতে গুছাতে, জুতার ভিতর পা গলাতে গলাতে, একটাই আফসোস জাগে- আহা, পৃথিবীর সবগুলো মানুষ যদি নিজ নিজ ব্যস্ততা ভুলে কখনো মন দিয়ে সন্ধ্যে-বিকেল দেখার সময় পেতো! কেউ কী কখনো তাহলে খারাপ হতে পারতো? কে জানে!

Comments

  1. আপ্পিইইইইইইই আপনি কিভাবে যে এত্তো সুন্দর করে লেখাগুলো লিখেন......... আমি বুঝিনা :-S
    আমারও মনে একই প্রশ্ন। উত্তর খুঁজে পাইনা.............

    মানুষ এত্তো ব্যস্ত কেন???? আমিই বা এত্তোও ব্যস্ত কেন??? বিকাল-সন্ধ্যা দেখার সময় আমারও হয়না............ সবাই শুধু দৌড়াচ্ছে....... আমিও দৌড়াচ্ছি......... মাঝে মাঝে মনে হয়, দিনটা যদি ২৪ ঘণ্টা না হয়ে ৩০ অথবা ৩৫ ঘণ্টা হত!!! তাহলে সবকিছুই সুন্দরভাবে করতে পারতাম............. মনের মধ্যে কত্তোওওওওও কিছু করার ইচ্ছা আছে.... কিন্তু কিছুই করা হয়না সময়ের অভাবে............... হায়রে সময়!!!!!! হায় জীবন..... :'(

    ReplyDelete
  2. ক’দিন আর বাঁচবো? কী লাভ এতো টেনশন নিয়ে?

    অনেকবার এই কথা মনে হয়েছে... আজও মনে হয়...
    আমিতো অনেক মন দিয়ে সন্ধ্যে-বিকেল দেখি!! কিন্তু...... কীইবা লাভ ভালো হয়ে? ব্যস্ত হয়ে থাকার মাঝেই তো ঢের আনন্দ!!

    ReplyDelete

Post a Comment